রবিবার রাত ৯টা নাগাদ বাংলাদেশে মংলা বন্দর ও পশ্চিমবঙ্গের সংলগ্ন সাগর দ্বীপের উপর দিয়ে প্রায় ১৩৫ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এই ঘূর্ণিঝড়টি অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল এবং এর কারণে উভয় দেশের উপকূলীয় এলাকাগুলিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
পশ্চিমবঙ্গে চার জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান, যার ফলে রাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়ে। ঝড়ের কারণে বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উপকূলীয় এলাকার অনেক স্থানেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে ঝড়ের ফলে প্রায় ১০০০টিরও বেশি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে এবং প্রচুর গাছপালা উপড়ে গেছে। অনেক রাস্তায় যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে, এবং উদ্ধারকর্মীরা পরিস্থিতি সামাল দিতে দিনরাত কাজ করছেন।
বাংলাদেশে প্রায় তিন মিলিয়ন এবং পশ্চিমবঙ্গে হাজার হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে কমপক্ষে ১,২০০ বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে এবং ৩০০ কাঁচা বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনঃস্থাপনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু বিপর্যস্ত অবস্থা স্বাভাবিক হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে বলে তারা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু এলাকায় আগাম বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছিল, এবং পতিত গাছ ও বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে উপকূলীয় অনেক শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও ব্যাহত হয়, বলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। অনেক এলাকায় জলমগ্ন হওয়ার কারণে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন মেরামত করতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক গ্রামে খাবার ও পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে, এবং সরকারের তরফ থেকে ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে।
২৭ মে ভারী বৃষ্টিপাতে কলকাতার রাস্তায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, একাধিক স্থানে দেওয়াল ধসে পড়ার খবর পাওয়া যায় এবং কমপক্ষে ৫২টি গাছ উপড়ে পড়ে। রাস্তায় জমা জল সরাতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি পুনর্গঠনের জন্য পৌরসভার কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। রবিবার থেকে ৫০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল হওয়ার পর কলকাতায় ফ্লাইট পুনরায় চালু করা হয়। এছাড়াও উপনগর ট্রেন পরিষেবা পুনরায় শুরু হয়েছে। তবে অনেক যাত্রী এখনও অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশেই কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষকে ত্রাণকেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ভারী বৃষ্টি এবং উপকূলীয় এলাকায় জলস্তরের বৃদ্ধি জনজীবনে বিঘ্ন ঘটায়। কলকাতায় ফ্লাইট পুনরায় চালু হয়েছে এবং উপনগর ট্রেন পরিষেবাও পুনরায় চালু হয়েছে। তবে, অনেক মানুষ এখনও তাদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে পারেনি এবং ত্রাণকেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। খাদ্য, পানীয় জল এবং চিকিৎসা সেবার অভাব নিয়ে তারা সরকারের প্রতি সহায়তার আবেদন জানাচ্ছেন।
অন্যদিকে, ভারত ও বাংলাদেশের সরকার যৌথভাবে উদ্ধার ও পুনর্বাসনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলি ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করছে এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করছে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করতে মাঠে নেমেছে। তারা খাদ্য, পানীয় জল, ওষুধ এবং অন্যান্য জরুরি সামগ্রী বিতরণ করছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এবং পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছেন। সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলতে এবং নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
অবশেষে, ঘূর্ণিঝড় রেমাল আমাদের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ এনে দিয়েছে, কিন্তু আমরা সবাই মিলে এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব।